top of page

পিসিমা আর ক্রান্তি জোর্দার গপ্প সপ্প

তুষার ভট্টাচার্য

SPOUT.

সরস্বতী পুজো। সকাল থেকেই চারপাশে আনন্দ,হৈচৈ, শাঁখের আওয়াজ,পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণ আর কচিকাঁচাদের কলকাকলি। মনটা যেন অজান্তেই সতেজতা আর পবিত্রতায় ভরে যায়। তার ওপর সেদিন টা যদি হয় ছেলের জন্মদিন? তাহলে তো প্রাণে খুশির তুফান ওঠে তাই না!? আমারও ঠিক তাই হয়েছিল। তবে আরও একটা অভাবনীয় ঘটনাও ঘটলো সেদিন। সারাটাদিন দারুণ আনন্দে কাটানোর পর সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে হঠাৎ করে ডানহাত থেকে কিরকম যেন জর্দা জর্দা গন্ধ নাকে এলো। কি ব্যাপার! আমি তো পানই খাইনা। তাহলে কোত্থেকে এতো জর্দার গন্ধ আসছে!?
এই রে! বন্ধুদের এবার বুঝি ভ্রু কুঁচকে উঠলো। ভাবছেন এসব আবার কি আজগুবি কথা! আরে... আপনারা ভুলে গেছেন? আমি কিছুদিন আগে বলেছিলাম না যে আমার এক 'পিসিমা' আছেন,দারুণ আমুদে, মজাদার এবং যাঁর কাছে আমি মাঝেমাঝেই গিয়ে একটু গপ্পসপ্প করি? আর উনিই তো সবসময় পান জর্দা মুখে নিয়ে থাকেন। আর সরস্বতী পুজোর দিন সন্ধেবেলায় তো ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে ওনার কাছেই গিয়েছিলাম ওনার আশীর্বাদ চাইতে। কিছুক্ষণ গল্পগাছা হলো। আর তাই বোধহয় গায়ে হাতে একটু জর্দার গন্ধ চলে এসেছে! তবে আমার ওই 'পিসিমা' কিন্তু আবার যে সে জর্দা মুখে দেবেন না। ওনার চাই 'ক্রান্তি জোর্দা'!

পিসিমা'র কোঁচড় ভর্তি কিন্তু হরেকরকম রঙবেরঙের গপ্প! বন্ধুরা একবার কি ওনার পাশটায় গিয়ে বসবেন নাকি? খুব ইচ্ছে করছে কি? চলুন তাহলে একদিন বিকেল বিকেল সুন্দর করে 'চুল' বেঁধে সেজেগুজে 'পিসিমা' যে 'রোয়াকে' দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর পানের বাটা নিয়ে বসে যাঁতায় সুপুরি কাটেন আর বিকেল অব্দি রোদ পোয়ান সেখানে একটা 'কোলবালিশ' টেনে নিয়ে বসে পড়ি। গল্প শুনতে শুনতে সন্ধে হয়ে গেলে 'পিসিমা'র যে একখানা পুরোনো মান্ধাতার 'হিটার' আছে তাতে চা'ও বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। ও আচ্ছা, উনি কিন্তু আরেকটা জিনিসও দারুণ বানাতে পারেন, 'লাল ডিম'। উফফ তার যা স্বাদ না!! ওহো আরেকটা কথা তো বলাই হয়নি। শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে! আমার পিসিমা'র বাড়ির পিছনে বেশ একটা ঘন জঙ্গল আছে। আর রাতের অন্ধকারে সেখানে কখনোসখনো একজোড়া হিংস্র চোখ জ্বলজ্বল করে। কার আবার, 'বাঘে'র! তাও আবার যে সে বাঘ নয়,সে হলো 'চন্দননগরের বাঘ'। আর হ্যাঁ পিসিমার বাড়ি যাবার রাস্তাটা কিন্তু খুব সরু। টোটো,অটো, রিকশা কিছুই ঢুকবে না। তাই অগত্যা হেঁটে বা কারোর যদি 'সাইকেল' থাকে তাহলে তাতে করে। আসলে পিসিমা একটু পুরোনো দিনের মানুষ তো!? তাই মোটরসাইকেল / স্কুটার চালানো লোকেদের খুব একটা আমল দেন না।

আচ্ছা বন্ধুরা, এই যে আমি এতোক্ষণ ধরে যা যা কথা বলে গেলাম সেগুলো কি একটু অদ্ভুত লাগলো? মানে সরস্বতী পুজো,ছেলের জন্মদিন, তারপর কোত্থেকে আবার এক 'পিসিমা' আর তার 'ক্রান্তি জর্দা'র গল্প চলে এলো? এসব আবার কি! এগুলোর মধ্যে আদৌ কি কোনো সম্পর্ক আছে? কেমন যেন এলোমেলো,অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে তাই না! বুঝতে পারছেন না যে আমার এতোটা গৌরচন্দ্রিকা করার আসল উদ্দেশ্য টা কি? মানে আমি বলতেটা কি চাইছি? প্লিজ বন্ধুরা আর বিরক্ত হবেন না।

নাঃ এবারে একটু ঝেড়েই কাশা যাক। আরে না না, হাতে জর্দার গন্ধ টন্ধ ওসব কিচ্ছু নয়। সরস্বতী পুজোর দিন সন্ধেবেলা আমার ছেলে তার শুভ জন্মদিন উপলক্ষে তার তুষার কাকুর কাছ থেকে একটা বই - 'পিসিমা আর ক্রান্তি জোর্দার গপ্পসপ্প' উপহার হিসেবে পেল। আর লেখক? আরে ওই তো আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয়, ভালোবাসার মানুষ শ্রী তুষার ভট্টাচার্য্য মহাশয়! সত্যি, তিনি যে কি কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছেন সেটা আপনারা বইটা হাতে পেলেই বুঝবেন। লেখক হিসেবে এখানেই তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। সাদাকালো অক্ষরের বুনোটে সুনিপুণ হাতে তৈরী করে গেছেন মোট আঠারোটি ছোটো ছোটো মজাদার গপ্পো। আর সেসবই তাঁর জীবনের ফেলে আসা সময়ের টুকরো টুকরো সত্য ছবি। হ্যাঁ ছবি। কি অপূর্ব! অক্ষরে অক্ষরে যে এতো সুন্দর ছবি আঁকা যায় তা গল্পগুলো না পড়লে বিশ্বাস করাই কঠিন!

যেমন পরিচ্ছন্ন,ঝরঝরে তরতরে লেখা তেমনই তার স্বচ্ছন্দ গতি। তুষার বাবু মানুষটা যেমন রসিক ওনার লেখার পরতে পরতেও ঠিক সেইরকমই হাস্যরস যেন উপচে পড়ছে। আর দীপক বাবু মানে শ্রী দীপকরঞ্জন ভট্টাচার্য মহাশয়ও বইটির প্রাককথনে তাঁর কলমে এতো সুন্দরভাবে তুষার বাবুকে এঁকেছেন যে সেটা পড়েই তাড়াতাড়ি বইয়ের পাতা ওল্টাতে ভীষণই কৌতূহল জাগে। আর তারপর যতই পাতা ওলটাবেন ততোই হাসতে হাসতে পেটে খিল তো ধরবেই ধরবে। ঠিক যেমনটা প্রথম গল্পটা পড়ে আমার ছেলের অবস্থা হলো আর কি! আর লেখার ভাষা! গল্পের প্রতিটা লাইন পড়তে গিয়ে মনে হয় আরে এ তো আমারই মনের কথা। আমার মা-ও তো ঠিক এমনি করেই যেন কথা বলতেন! মানে একটা গল্পের শুরুতে দুতিন লাইন পড়েই অদ্ভুতভাবে কি তাড়াতাড়ি যে লেখক এবং পাঠকের মেলবন্ধন ঘটে যায়, চোখ আর মনকে বইয়ের পাতায় আটকে রাখে যতোক্ষণ না পুরোটা পড়া শেষ হচ্ছে ততোক্ষণ ! আর ঠিক এখানেই তো লেখকের সার্থকতা। শুধু আক্ষেপ এটাই যে আমরা ওনাকে কেন আরও আগে পেলাম না! তাহলে তো আমরা এতোদিনে অনেক বেশী সমৃদ্ধ হতে পারতাম ওনার সৃষ্টিশীলতায়!! তবে আগামী দিনে হয়তো এ আক্ষেপ আর থাকবেনা বলে আমার মনে হয়।

এবারে আসি বইয়ের প্রকাশকের প্রসঙ্গে। বইটির প্রকাশক SPOUT BOOKS. প্রথম সংস্করণেই তাঁরা বাজীমাত করে ফেলেছেন। মানে বইয়ের কলেবরটি এতো সুন্দর করেছেন না যে বইটি হাতে নিয়ে যেন মাখনের মতো অনুভূতি হয় আর খুব তাড়াতাড়ি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে করে!! ওই যে কথায় বলে না, "পহলে দর্শনধারী পিছে গুণ বিচারী"। এক্ষেত্রে অবশ্য দুটোই, মানে রূপ এবং গুণ দুয়েরই অপূর্ব সমাহার। প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ, পাতার এবং ছাপার গুণমান নিয়ে তো কোনো কথাই হবে না। আরও একবার SPOUT BOOKS কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই এইজন্য যে ওনারা সত্যিই জহুরি, তাই জহর চিনেছেন।

তা বন্ধুরা আপনারা যদি আমার মতো হাতে সুগন্ধী 'ক্রান্তি জর্দার' গন্ধ পেতে পছন্দ করেন তাহলে আর দেরী না করে খুব শীগগির কিনে ফেলুন 'পিসিমা আর ক্রান্তি জোর্দার গপ্পসপ্প'। আর প্রিয়জনদের উপহার হিসেবে তো অবশ্যই দেবেন।

Ms. Saswati Das

©2021 by SPOUT BOOKS. Proudly created with Wix.com

bottom of page