জাপান দেশের সাহিত্য বিশ্ব–সাহিত্যে অনবদ্য। স্থূল আঙ্গিকে লিখতে গেলে বলাযায়—পাশ্চাত্যের অবজেক্টিভিটি, প্রাচ্যের সামাজিক বুনন, আফ্রিকার লোকাচার, আর সুদূর প্রাচ্য অর্থাৎ জাপানী সাহিত্যে বর্ণিত সাব্জেক্টিভ অবস্থান এবং ব্যাখ্যান বিশ্ব–সাহিত্যের গড়পড়তা ভাগ-বাঁটোয়ারা। জাপানে যে ধরনের বই প্রচলিত, তার আক্ষরিক মাপ ভারতীয় এবং পাশ্চাত্যের বই-এর প্রচলিত মাপের সঙ্গে মেলে না। জাপানী ভাষায় 'কোহন' অর্থে এক বিশেষ ছোট মাপের বই বোঝায়। সেই মাপের নাম অনুযায়ী এই বই কোহন।
এই বইতে চেষ্টা করা হয়েছে জাপানী নবজাগরণ বা 'ইডো' সময়কালীন কাঠের প্রিন্ট পদ্ধতির সঙ্গে পাঠক-কে পরিচিত করানোর। এই সময়ের কাঠ-খোদাই ছবিতে প্রথমে সাধারণ কাগজে হাতেকরে ছবি এঁকে তা দিয়ে কাঠের ব্লকে ছাপ নেওয়া হত এবং সেই লাইন অনুযায়ী কাঠ-খোদাই ক'রে তার ওপর রং মাখিয়ে সেটিকে পাতলা 'ওয়াশি' কাগজের ওপর উল্টো ক'রে রেখে তার উপরে 'বারেন' দিয়ে চাপ দিয়ে রঙিন ও সাদাকালো ছবি তৈরি করা হত। বারেন হল দড়ি এবং বাঁশ-পাতার সাহায্যে তৈরি একটি গোল চাকতি। আধুনিক সময়ে রকমফেরে বারেন-এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত।ইডো, সতেরো শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত সামরিক সরকার দ্বারা পরিচালিত এক দীর্ঘ সময়। এই সময়ের নান্দনিক শিল্প 'উকিইয়ো-ই' নামে পরিচিত। ইডো শিল্পীরা 'কাবুকি' অর্থাৎ জাপানী নাটকের কলাকুশলী এবং সুন্দরী মহিলাদের ছবি তৈরির জন্য বিখ্যাত। ইডো যুগের ছবিতে চীনের নান্দনিকতার ছাপ থাকলেও, এর মোটা লাইন, এক পরতের রং, এবং একমাত্রিকতা বিশেষত্বের দাবি রাখে। স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি এবং অসম্পূর্ণ ফ্রেমিং এই সময়ের কাজের আরেক বিশেষত্ব। এসময়ের চিত্র ও মুদ্রণ শিল্পকে জোরদার রঙ-ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য দিয়ে এক নজরে আলাদা করাযায়। এই বইতে চেষ্টা করা হয়েছে ইডো যুগের বিখ্যাত কাঠ-খোদাই চিত্রগুলির ডিজিটাল মুদ্রণ করার। জাপানী কপিরাইট আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি ছবি সর্বস্বার্থে সংরক্ষিত।
আকুতাগাওয়া রিয়ুনোসুকে
জাপানের আধুনিক সাহিত্যে একটি অগ্রগণ্য নাম আকুতাগাওয়া রিউনোসুকে। তাঁকে ‘জাপানী ছোটগল্পের জনক’ বলে মনেকরা হয়। ১লা মার্চ ১৮৯২ সালে টোকিওর কিয়োবাশিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর মায়ের মানসিক বিকার দেখা দেয়। ফলে মাতুলালয়ে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই তাঁর নাম রাখা হয় আকুতাগাওয়া।
ছাত্রাবস্থায় তিনি তাঁর মেধার পরিচয় দেন। ১৯১৬ সালে টোকিও ইম্পেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই একই বছরে তাঁর লেখা তিনটি গল্প প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯১৮ সালে তিনি সুকামতো ফুমিকোর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।একজন ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং হাইকু কবি হিসেবে পরিচিত আকুতাগাওয়া শতাধিক ছোটগল্প লিখেছেন। জাপানের আরেক বিখ্যাত সাহিত্যিক নাৎসুমে সোসেকি-র প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তাঁর রচনায়। তাঁর বিখ্যাত কিছু গল্প হল—‘রাশোমন’, ‘হানা’, ‘ইয়াবু নো নাকা’, ‘কাপ্পা’ ইত্যাদি। তাঁর গল্পে জাপানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, সমাজজীবন, মানুষের জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা—সবকিছুই প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। সর্বোপরি তাঁর আধুনিক চিন্তা-ভাবনার প্রভাবে গল্পগুলি অন্য মাত্রা পায়। তাঁর বেশকিছু গল্প পরবর্তীকালে চলচ্চিত্রায়িত হয় ও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্র-পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া নির্দেশিত ‘রাশোমন’ ছায়াছবিটি।১৯২৭ সালের ২৪শে জুলাই মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করে আত্মহননের পথ বেছে নেন আকুতাগাওয়া। মাত্র ১১ বছরের সীমিত সাহিত্যজীবনে তিনি যা কিছু রচনা করেছেন, তা জাপানী সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তাঁর স্মৃতিতে জাপানের প্রধান সাহিত্য পুরস্কারের নামকরণ করা হয় ‘আকুতাগাওয়া পুরস্কার’। তাঁর অসামান্য রচনা-সম্ভার বিশ্বসাহিত্যে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।—সাবির আলি, অনুবাদক।
কোহন
Paperback Binding
Folio count 88
85gsm
Size: 11cm/ 18cm
Illustrated with digitally reproduced woodcut prints
Fulfilled by India Post
Choose from shipping options, between Free Shipping, Registered Shipping with Tracking facility at Flat Rate, or Physical Pickup, while checking out.