শুরুর শুরু
যে গপ্পোটা বলচি আপনাদের─আমাদের তারানাত থাকলে বলতো─সে এক হিসেবে সরেসও বটে, আবার সরসও বটে। আমার আবার ওই সরস শব্দটা শুনলেই কেমন রসালো ফল মনেহয়। তবে তারা বলেছিল সরস মানে যাতে রস আচে। আবার রস মানেই যে সবসময় তা ভালো হবে তা নয়! বলতো ও! তারানাত। খারাপ রসও হয়─বীভৎস রস নাকি! মানে ফলটা পচে গেল হয়তো। পচে একটা বীভৎস ব্যাপার হল─সেইরকম। মানে, আমি ওইভাবেই বুজেছিলুম। ও নাটকের কিসব শাস্ত্র আচে─সেসব পড়তো। আরো কত কত পড়তো! কেন যে অত পড়তো! সেই তো গিয়ে পড়লি বাবা খুনোখুনি’র মধ্যে! তবে রক্তারক্তি ব্যাপার নয়। সে ওর দ্বারা হতো না। আমি হলে হতে পারতো। আমার অতসব বুদ্দি-ফুদ্দি নেই। আমার সঙ্গে লাগতে এলে আমিও দেখে নেবো─এই আমার কতা! আর যদি তোমার জোর বেশী থাকে, তবে অন্ধকার রাস্তায় যখন একলা... যাগ্গে! আমার কতা থাক। হচ্চিলো তারার কতা। ওই রক্তের সম্বন্ধ নিয়ে। যাগ্গে, বেশী কতা বলবো না। আপনারা যাঁরা বই-টই খবরকাগজ-টাগজ পড়েন আর কি, তাঁরা আমার চাইতে অনেক বেশী বুদ্দি ধরেন। ও আপনারা পড়তে পড়তে ঠিক ধরে ফেলবেন।
দেকুন, আমি তো আর সেবাবে নেকাপড়া শিকিনি। অত বই-টইও পড়িনি─ও আমার পোষায়ও না। ওই তারার পাল্লায় পড়ে─শুদু আমি না─বালি’ও... তো তারা যখন গপ্পো বলতো─মানে যেকোনো গপ্পো আর কি─বলতো যে গপ্পের নাকি শুরু আর শেষ বলে কিচু হয় না! কী যে তার মানে কে জানে! আমি তো অমন কতা বাপের জম্মে শুনিনি। ও আমাকে একটা বই─ওই পত্তিকা আর কি─দিইচিল পড়ার জন্য। কী যে নাম, সে আমার মনেও নেই। পত্তিকাটাই হাওয়া হয়ে গেচে কোতায়! বলেচিল যে ককোনো যদি ওর কতা কাউকে বলি, তবে ওই পত্তিকা থেকে যেন একটুক নিকে দিই। ও দেকিয়ে দিয়েচিল─কোত্তেকে টুকতে হবে। আমার তো আবার হাতেল্লেকা... শেষে বালি’কে বললাম একটা কাগজে আলাদা করে নিকে দিতে─ও বেশ বই-টই পড়তো─দুকুরবেলা কিসব নিকতো-টিকতো একটা খাতায়─তো ও নিকে দিয়েচিল। দিচ্চি, দাঁড়ান এখানে।
এই যে, পেয়েচি খুঁজে। তেরোশো পঁয়তিশ মানে, দাঁড়ান, গুনে বলি─হ্যাঁ, ঊনিশশো আটাশ সালের একটা পত্তিকা। মাঘ মাস। কী সব কটিন কটিন কতা বাপ! ওই সম্পাদক্কো না কী বলে─ওকান থেকে টুকে দিইচিল বালি। এই যে─
“…ঘোরনাদী রবে যে মহামারী সুদূর মাঞ্চুরিয়া হইতে বিহার প্রদেশে আসিয়া উপর্যুপরি তাহার সুতীক্ষ্ণ নখর ও জিহ্বা বাহির করিয়া তাবৎ মনুষ্যকূল ধ্বংস করিতে উদ্যত হইয়াছে, তাহার দিকে ইংরাজ বাহাদুরের কি নজর পড়ে না? তাহাদের রাজদণ্ড কি তবে সত্যই এই অভাগা দেশের মানুষের রক্তশোষণের নিমিত্তই উত্তোলিত হয়? যে আপামর দীনদরিদ্র হইতে শুরু করিয়া মধ্যবিত্ত ও ধনী এই রোগের কবলে পড়িয়া প্রাণ হারাইতেছেন, তাঁহারা কি মহামান্য পঞ্চম জর্জ-এর কোষাগারে তাহাদের রক্তজল করা অর্থ ট্যাক্সরূপে জমা করিতেছেন না? নাকি মহামান্য ভাইসরয় লর্ড আরউইন মহাশয় চক্ষু বুজিয়া কেবল বৈদ্যুতিক পাখার হাওয়া খাইতেই ব্যস্ত? এই যে নবনবোন্মেষিত মৃত্যু-বিভীষিকা─”
আরো ছিল খানিকটা। কিন্তু শেষদিকটা দেকচি ছেঁড়া! কবেকার নেকা! শেষটা কোতায় ছিঁড়ে চলে গেচে কালের গভ্যে ─যাগ্গে! ও দিতে বলেচিল, তাই দিলুম। নৈলে ও নেকার কী মানে, তা আমার কেন, আমার বাপ-চোদ্দপুরুষের─নাঃ ─তা তারা পারতো। আমিই পারি না। ওই যে বলে না, দৈত্যকূলে পেল্লাদ? আমার হল উল্টো─পেল্লাদ কূলে... মানে তাই বলে আমার পুব্বোপুরুষরা যে ধোয়া তুলসীপাতা ছিল তা নয়! এই যে আমার জন্মের─ওই দেকুন─আবার আমার কতা বলতে লেগেচি! বরং গপ্পোটা বলি শুনুন। তারানাতেরই গপ্পো। আমিও একটুকখানি আচি─ওই আর কি!
নীলোৎপল সৌগত
Boimatreyo
Bengali