প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
![](https://static.wixstatic.com/media/a40ef3_fedd90b1b2494b06a204a2047bbab338~mv2.jpg/v1/fill/w_147,h_170,al_c,q_80,usm_0.66_1.00_0.01,blur_2,enc_auto/a40ef3_fedd90b1b2494b06a204a2047bbab338~mv2.jpg)
ঠিক কোথাথেকে শুরু করলে ভালো হবে ... মেলানি ক্লেইন বলে এক ভদ্রমহিলা ছিলেন, যিনি বিশ্বে প্রথম; কচি-বাচ্চার সুখের যায়গা ভেঙে, গোড়ায় গলদের উঠোনটুকু নিকিয়ে, ভালো মা (ভালো বোতল), আর পচা মা (পচা বোতল) হিসেবে ভাগ ক'রে দিয়েছিলেন--হিসেব হলো, খিদে পেলো কি না পেলো; একদম তৎপর দুধ খাওয়ালে ভালো মা, নয়তো মা ব্যাটা পচা। ক্লেইন বললেন বাচ্চার সমস্ত অস্তিত্ব-বোধ এবং অনুভুতি এই দুই ভালো আর পচা চিন্তার খিচুড়ি, আর এখানেই শেষ নয়; কম্পানি আরো দিচ্ছে, ক্লেইন আরো বললেন এ খিচুড়ির স্বাদ জীবদ্দশায় যাওয়ার নয়, তা আপনি ছেলে হোন বা মেয়ে, সুস্থ হোন বা মানসিক বিকারগ্রস্ত, প্রত্যেক খিচুড়ি, খিচুড়ি পদবাচ্য হলেও, তাদের রেসিপি আর স্বাদ স্বতন্ত্র। তাই মুখে-মাছ না হওয়া, শুধুমাত্র খিচুড়ি খাওয়া, এই আধ দামড়া গাদা গাদা খোকা-খুকী ওজন মেপে; যে মাত্র উদোর বয়সে পৌঁছালে; সেই কিনা উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে, বোতল ব্যাটাই চোর বলে, ঐতিহাসিক প্রথাসিদ্ধ পথে দাগিয়ে দিলে গা! অগত্যা গোটা অরয়েলিয়ান খামাড় হৃদয় হিল্ললিয়া ভাবে 'চলো, বোতল (যে কিনা আসলে মহিলা, যে কিনা গোড়ায় মা বটে; তাকে) কন্ট্রোল করি'--কি সব্বুনেশে কতা বলো দিকি!
খেয়াল করে দেখবেন মানব জাতির ইতিহাস আসলে এই মহিলা কন্ট্রলের দলিল। আশাকরি যারা এই ব্লগ পড়ছেন তাদের শিম্পাঞ্জি অবস্থা থেকে এ.আই. অবস্থা পর্যন্ত মহিলা কন্ট্রলের গপ্প শোনাতে হবে না। বরং চলুন দেখি, হয়ত এই খতিয়ানে আমরা এমন অনেক সভ্যতা পাবো যেখানে সমাজ বুঝতে পেরেছিলো--আঁচল খসলেই উত্তেজিত রাম শ্যাম যদু মধু আসলে "উত্তেজিত" হয় না, ওটা ভাবাটাও ভাবের ঘরে চুরি। দেখুন দিকি, আমি লিখলাম "হয় না", কারণ আপনি ছেলে হ'ন বা মেয়ে, জামাকাপড় পরুন কিংবা না পরুন--সর্বক্ষণ যে "ইত্যাদি" করা সম্ভব নয়, বা ইচ্ছে করে না সেটা নিজে নিজেই বুঝতে পারবেন, হয়ত হরলিক্স খেতে খেতেও এমনি এমনিই বুঝে ফেলতে পারেন। তাই সঙ্গত কারনেই এই সমস্ত সমাজ সম্ভবত উঠতে বসতে সম্ভোগে প্ররোচিত (প্রভকড) হয়নি, অন্তত সেটা ধরে নেওয়া যায়। আর তাই এসমস্ত ক্ষেত্রে নারীকে ল্যাম্প পস্টে বেধে স্যাডিস্টিক প্লেসার পাওয়ার ইতিহাসও চোখে পড়ে না (না, মাথার মধ্যে যেটা ঘুরছে সেই স্থাপত্য কীর্তি হয়েছে অনেক পরে, চান্ডেল রাজারা করেছে, ওদের খাজনা বেশি ছিলো)। আর, আমরা এটুকু তো মানবো যে সমস্ত প্ররোচনা থেকে মুক্তি সভ্যতার সূচক?
উদাহরণ? ভারতের মতো কিছু সভ্যতায় বিয়ে, সন্তান উৎপাদন--পুরনো বই-টই অনুযায়ী, ছিলো "সাধারণ ধর্ম"। ঠিক যেমন উপনয়ন। তাই তারা সম্ভোগের প্রয়োজনীয়তাকে সন্তান উৎপাদনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলত না, এটাকে আলাদা ক'রে আমল দিতো বলেই মনেহয়। নয়তো, গুপ্ত যুগে বেশ্যাদের সমাজ গ্রহন করবে কেন? বরং, মেয়ে-বউদের পছন্দ না হলে, বেশ্যা বলে গালাগালি দেবে তাই না? যাইহোক, সম্ভোগকে বা এঞ্জয়মেন্টকে বস্তু নিরপেক্ষ প্রডাক্ট হিসেবে ভাবতে পারাটা তো আর ধেড়ে খোকাদের কাজ নয়! এসব গুপ্ত যুগে সম্ভব হয়েছিলো। ইয়ুং থাকলে বলত এসব সেই ওল্ড ওয়াইস ম্যান বা মহিলার কীর্তি। এই মুন্সিয়ানা ইতিহাসের আরও কিছু কিছু পর্যায়ে ভারতীয় সভ্যতা (এবং অন্য অনেক সভ্যতা) তাদের কালেক্টিভ চিন্তা ভাবনায় আনতে পেরেছিলো বলেই বর্তমানে আলোচিত সেই উপভগের আধার বা বস্তুকে, যা এই ব্লগে বারাঙ্গনা নাম্নী নারী--তাদের যোগ্য মর্যাদা দিতে পেরেছিলো ... লঘুকরনে পাওয়াযায়, এই বড় বড় বকুনির সবটাই "চেটেপুটে খাওয়া" গেছিলো গুপ্ত যু্গে! বলা বাহুল্য, হিঁদুয়ানি বা অন্য যেকোনো ইয়ানি যদি না আজন্তায় আলকাতরা লেপে না আসে তবে অজন্তা গুহা চিত্র; গুপ্ত যুগের এই প্রভুত "inclusive progress" -এর ধারাভাষ্য দেয় ... সগর্বে!
আর ঠিক ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো, আমরা মানে স্পাউট সুযোগ পেয়েই বাসের মধ্যে অজন্তা কম্পানির চিরুনি লুফে নিলাম, এবার তাহলে চিরুনি তল্লাশি চলুক, কম্পানি হরেক রকম চিরুনি দিয়েছে, নয় নয় আট খান! ঠিক করাহলো অজন্তার ওপর বইটা বেরুচ্চেই, আর বিষয়--অজন্তার নারী ( পড়ুন--মহিলা, নারী শব্দটা বড় কাব্যিক)--মহিলা মোর্চা নিয়ে কাজ হবে। ইতি মধ্যে প্রতিদিনে লেখকের এই বিষয়ে একটু আধটু লেখা বেরিয়েছে, তাই সেটিকেও দিলুম সে-ট-কে। তবে মনে রাখবেন লিংকে একটি মাত্র চিরুনি পেলেও আমাদের কাছে আছে আট খান পোলাপান! ... কথা সমেত, মটেও কচি নয় তারা।
দেখাযাক ভারতের স্বর্ণ যুগে কে কাকে কি ভাবে কন্ট্রোল করতো, বা আদৌ করতো কি? না হলে যে মেলানি ক্লেইন বড় দুঃখ পাবেন।
বইয়ের নামঃ অজন্তা সুন্দরী
লেখকঃ প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
প্রকাশক, পরিবেশনাঃ SPOUT, জুন ২০২৪
যথেষ্ট প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য
পরবর্তী অংশে বইয়ের ভূমিকার অংশ বিশেষ তুলে দেওয়া হলঃ
ভূমিকা
ভারতশিল্পে নারীমূর্তি সদারহস্যময়। ঠিক তেমনই রহস্য ছেয়ে থাকে অজন্তার গুহায় ...
... ঠিক এইরকম রহস্যময়ী এখানকার চিত্রে আঁকা নারীরা। দেবী থেকে সম্রাজ্ঞী, রাজনন্দিনী থেকে সখী, পরিচারিকা বা সাধারণ পৌরনারী হিসেবে তাঁরা উপস্থিত অজন্তার ভিত্তিচিত্রে। তাঁদের বেশভূষা, ভাব, চেহারা প্রভৃতিতে দর্শক মুগ্ধ হন, আকৃষ্ট হন। সেইসঙ্গে আশ্চর্যও হতে হয়। কারণ পরবর্তী যুগের সামাজিকতা, ঐহিকতা বা মূল্যবোধের সঙ্গে এই নারীদের বাহ্যরূপ একেবারে মেলে না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কী ভেবে এঁদের প্রতিকৃতি আঁকা হয়েছিল? কাদের চেহারার অনুকরণে শিল্পীরা এই নারীদের রূপ কল্পনা করেছিলেন? ...
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সরস্বতী পূজা
Reference link https://epaper.sangbadpratidin.in/.../m/828255/6608728ef0d2c
ছবি -- cc2.0 Jean-Pierre Dalbéra